কথা শিল্পী ময়না
কোনো শিশু যদি মানুষের কথাবার্তা হুবহু
নকল করে সুন্দর করে কথা বলে তবে এক বাক্যে সবাই তার
কথাকে ময়না পাখির সঙ্গে তুলনা করে। ময়নার কথা বলার এ শক্তি ও ধরন দেখে অবাক হতে
হয়। এ কারণে আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিশাল একটি অংশজুড়ে আছে ময়না
পাখি। এমনকি এখনো প্রিয় সন্তানের নাম ময়না রাখা মানুষ খুঁজতে বেশি দূরে
যেতে হবে না।কিন্তু ভালো কথা বলাই কাল হয়েছে পাখি ময়নার। ভালো কথা বলার
কারণে নিছক শখের বশে অনেক চড়া দামে মানুষ এদের কিনে বন্দি করে রাখে। শুধু
তা-ই নয়, পাহাড়ি এলাকার কিছু লোক শিকার করে এদের মাংস পর্যন্ত খায়। এ কারণে
এরা দুর্লভ হয়ে পড়েছে আমাদের দেশে। অথচ একটা সময় দেশের মিশ্র চিরসবুজ
অরণ্যে এদের মোটামুটি সাক্ষাৎ পাওয়া যেত। দেখা যেত পার্বত্য চট্টগ্রামের
বিভিন্ন অরণ্যেও। এ পাখি সাধারণত মাটিতে নামে না। বৃক্ষচারী। সারাদিন গাছে
গাছে বিচরণ করে খাবার সংগ্রহ করে। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট দলেও বিচরণ করতে
দেখা যায়। তবে সবচেয়ে মজাদার বিষয় হচ্ছে, স্ত্রী-পুরুষ পাখি আজীবনের জন্য
জোড়া বাঁধে। সঙ্গী না মারা যাওয়া পর্যন্ত ওদের জোড় অটুট থাকে।ময়নার
বৈজ্ঞানিক নাম গ্রাকুলা রেলিজিওসা । লম্বায় ময়না ২৫-২৯
সেন্টিমিটার। গায়ের পালক কালো। মাথা কুচকুচে কালো। ঘাড়ের উপরের দিক বেয়ে
দু’পাশে দুটি বড় হলুদ লতিকা দু’ভাগ হয়ে চোখের নিচে নেমেছে। এদের কালো ডানায়
একটি ছোট্ট সাদাটে পট্টি রয়েছে। চোখ গাঢ় বাদামি। ঠোঁট মজবুত গড়নের, বর্ণ
কমলা-হলুদ। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। প্রজননের সময় গলা ও ঘাড়ে বেগুনি আভা দেখা
যায়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। ময়না পাখি সর্বভুক। পোকামাকড় থেকে
শুরু করে ফুলের মধু এবং ফল সবই খায়। পোষা ময়না ভাতও খায়। প্রজনন সময়
বর্ষাকাল। মাটি থেকে প্রায় ১০-১৫ মিটার উঁচু গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। বাসা
তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো ঘাস, লতা ও পালক। একই বাসা অনেক বছর
ব্যবহার করে। ডিমের সংখ্যা ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শাবক
উড়তে শিখলেই মা-বাবার কাছ থেকে সরে পড়ে।
.............................................................A-Mpere LAB...............................................................................
No comments